অনলাইনে আয়কর জমা দেওয়ার সহজ উপায়

  1. Home
  2. »
  3. Uncategorized (শ্রেণী বহির্ভূত)
  4. »
  5. অনলাইনে আয়কর জমা দেওয়ার সহজ উপায়
অনলাইনে আয়কর জমা দেওয়ার সহজ উপায়

লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে সময় অপচয় করার দিন শেষ। কাগজপত্রের জটিলতা, দীর্ঘ লাইন ও আমলাতান্ত্রিক অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের করদাতাদের মাঝে  আয়কর জমা দেওয়া একটি আতঙ্কের নাম। 

কিন্তু আশার কথা এই যে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাথে সাথে এই কর প্রদান প্রক্রিয়াটি অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে যার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি আরও সময়সাশ্রয়ী, স্বচ্ছ ও সরল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড  (এনবিআর)  একটি ই-রিটার্ন সিস্টেম তৈরি করেছে যার মাধ্যমে ঘরে বসে অনলাইনে করদাতা হিসেবে আপনি রিটার্ন জমা দিতে পারবেন, এবং খুব অল্প সময়ে প্রাপ্তি স্বীকার ও কর সনদ সংগ্রহ করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ই পেমেন্ট করার সুযোগও রয়েছে।

এ পদ্ধতি করদাতাদের সময় বাঁচানোর পাশাপাশি প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা দিবে। তাহলে এখনই জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ঘরে বসেই জমা দিতে পারবেন আয়কর

আয়কর কী ?

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ও নির্ধারিত কর কে আয়কর বলে।  আয়কর সরকারি রাজস্ব বা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।

অনলাইনে আয়কর জমা দিতে  দিতে কী কী প্রয়োজন ?

প্রথমে ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে করদাতার আধিকারিক মোবাইল নম্বর দিতে হবে যেটা হবে বায়োমেট্রিকলি ভেরিফাইড। করদাতার অবশ্যই একটি ই-টিন নম্বর থাকা লাগবে।  এছাড়াও অন্যান্য প্রজন্ম কাগজপত্র যেমন – ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বেতন সনদপত্র, আয় বিবরণী, লাভ লোকসান বিবরণী, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব এসব তথ্য অবশ্যই দেখাতে হবে। 

এই সকল তথ্য ই-রিটার্নে জমা দিতে হবে।  কর রেয়াত পাওয়ার জন্য বিনিয়োগ তথ্য (সঞ্চয় পত্র, জীবন বীমা, ডিপিএস ইত্যাদি) অবশ্যই জমা দিতে হবে। 

কারা আয়কর জমা দেয়ার যোগ্য

কারো যদি কার যোগ্য আয় না থাকে তাহলে তার কর পরিশোধ করতে হবে না শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।  আয়কর দিতে হলে বিগত অর্থ বছরের জুলাই থেকে বর্তমানে জুন মাস পর্যন্ত সকল আয় ও ব্যয়ের হিসাব করে চলতি বছরের আয়কর দিতে হবে। 

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে । এই আয়সীমার বাহিরে গেলে উক্ত ব্যক্তি কে কোড দিতে হবে।  অন্যদিকে মহিলা এবং বয়স্ক ব্যক্তির (৬৫ বছর বা তার উপরে)  বাৎসরিক আয় ৪ লাখ টাকার এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন। 

অন্যদিকে প্রতিবন্ধী  ব্যক্তি ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতার আয় সীমা  ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার  উপরে হলে তাকে অবশ্যই আয়কর দিতে হবে। গ্যাজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হবে পাঁচ লাখ টাকা।

আয়কর জমা দেওয়ার সঠিক সময়

আয়কর জমা দেওয়ার সঠিক সময় সাধারণত প্রতিবছর ৩০ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। আয়কর দেওয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।  করদাতা প্রতিবছর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিনা জরিমানায় আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারে।

আয়কর মেলাতেও রিটার্ন দাখিল করা যায়। এমনকি কোন বাংলাদেশী বিদেশে অবস্থান করার সময় বাংলাদেশী দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।  এছাড়াও যথার্থ কারণ উল্লেখ করে বৃদ্ধির জন্য আবেদনও করতে পারেন।অবশ্য প্রয়োজন হলে করদাতা নির্দিষ্ট সময়ের আগেও আয় কর জমা দিতে পারেন

রেজিস্ট্রেশন করার প্রক্রিয়া

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমেই ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটের প্রবেশ করতে হবে এবং রিটার্ন বাটনে ক্লিক করতে । এরপর ডান পাশের নিচে থাকা রেজিস্ট্রেশন বাটন বাছাই করতে হবে।

টিন নম্বর ও ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর সঠিকভাবে ইনপুট করে ওয়েবসাইটে আসা ভেরিফাই অপশনে ক্লিক করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে করদাতার মোবাইলে (যেটি মাত্র দেওয়া হয়েছে)  একটি ওটিপি চলে আসবে। ওটিপি’র কোডটি নির্ধারিত স্থানে বসিয়ে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিতে হবে।  পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরপরই সম্পূর্ণ হবে এবং আপনি একটি ই-রিটার্ন অ্যাকাউন্ট পেয়ে যাবে ।

আয়কর রিটার্ন দাখিল

  • ই-রিটার্ন ড্যাশবোর্ডে গিয়ে করদাতা রিটার্ন সাবমিশন অপশনে গিয়ে দুটি পেইজ পাবে যা হলো – সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন এবং ডিটেইল রিটার্ন। কোন ব্যক্তির কর আয় পাঁচ লাখ টাকার কম হলে এবং সম্পদে পরিমাণ ৪০ লাখ টাকার কম হলে সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন বাছাই করতে হবে। 
  • এর উপরে গেলে ডিটেইল রিটার্ন পেজে যেতে হবে।  সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন অপশনে গেলে এক পাতার রিটার্ন পূরণের শর্তাবলি  পপ-আপ আকারে আসবে যেখানে করদাতাকে টিক দিতে হবে। এখানে বিভিন্ন শর্তাবলী দেয়া থাকবে যেমন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারের পরিচালক নন, সিটি কর্পোরেশনের গৃহ সম্পত্তির মালিক নন, বিদেশে পরিসম্পদের মালিক নন ইত্যাদি এবং করদাতাকে এসবের টিক দিতে হবে।
  • পরবর্তীতে আয়ের প্রধান উৎসের স্থান বাছাই করে সাবমিট করতে হবে। এই ধাপ পার করার পর করদাতার কাছে একটি রিটার্ন খসরা পেজ আসবে যেখান থেকে করদাতাকে বিভিন্ন তথ্য যেমন আয়ের উৎস, মোট সম্পদ, আরোপযোগ্য কর, মোট আয়,মোট ব্যয়, প্রদেয় কর, রিটার্নের সহিত প্রদত্ত কর ইত্যাদি প্রদান করতে হবে। 
  • পরবর্তীতে সেভ এজ ড্রাফটকে নির্বাচন করে সেভ করতে হবে।  অথবা করদাতা সাবমিট রিটার্ন অনলাইন বাটন নির্বাচন করে সাবমিট করতে পারবেন।
  • অন্যদিকে যাদের আয় ৫ লাখ টাকার বেশি এবং পরিসম্পদ ৪০ লাখ টাকার বেশি তারা ডিটেইল রিটার্ন অপশনে ক্লিক করবে। 
  • ডিটেল রিটার্ন অপশনে ক্লিক করলে দুটি পেইজ আসবে যা হলো – অ্যাসেসমেন্ট ইনফর্মেশন এবং হেডস অব ইনকাম। এখানে অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার ও ইনকাম ইয়ারের ঘরে সাল ও তারিখ ডিফল্ট হিসেবে থাকবে।
  • পরবর্তীতে ডান পাশের হেডস অফ ইনকাম এর নিচের শর্তাবলীতে টিক দিতে হবে। বিভিন্ন শর্তাবলী দেওয়া থাকবে যেমন – ইনকাম ফ্রম বিজনেস, ইনকাম ফ্রম এমপ্লয়মেন্ট, ক্যাপিটাল গেইনস,ইনকাম ফ্রম আদার সোর্সেস ইত্যাদি যেখান থেকে করদাতাকে উপযুক্ত অপশন বাছাই করতে হবে। এমনকি করদাতার বিদেশি আয়ের উৎস হলে সেটাও উল্লেখ করতে হবে এবং সেই ঘরে টিক দিতে হবে। 
  • এই সকল তথ্য দেওয়ার পর সেভ এন্ড কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
  • এসব তথ্য দেওয়ার পরে অ্যাডিশনাল ইনফর্মেশন এ অন্যান্য তথ্যাবলী দিতে হবে যেমন করদাতার কর্মক্ষেত্রের কোন স্থানে রয়েছে সেটার নাম।  যেমন – ঢাকা নর্থ সিটি বা সাউথ সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি। এছাড়াও নিজের মোটর কার আছে কিনা বা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে নিজের বাড়ি আছে কিনা এসব তথ্য প্রদান করতে হবে টিক দিয়ে এবং সেভ এন্ড কন্টিনিউ বাছাই করতে হবে। 
  • আরো কিছু পেজ আসবে যা হলো  – অ্যাসেসমেন্ট, ইনকাম, রেবেট,ব্যয়ের তথ্য, ট্যাক্স এন্ড পেমেন্ট, আয়কর ও পরিশোধ ইত্যাদি যা করদাতাকে  তাকে পূরণ করতে হবে।
  • বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সবকিছু দেখে নিয়ে সাবমিট রিটার্ন বাটনে ক্লিক করে রিটার্নটি সাবমিট করতে হবে।

এভাবেই করদাতা সফলভাবে আয়কর প্রদান করতে পারবে।

রশিদ প্রাপ্তি

রিটার্ন জমা দেওয়ার পর সিস্টেম থেকে একটি রশিদ তৈরি হবে যা পিডিএফ আকারে সংরক্ষণ করা যাবে। এর রশিদ করদাতার রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। করদাতার যদি ভুলক্রমে কর প্রদানের হার বেশি হয়ে থাকে তাহলে সরকার থেকে রিফান্ড পেতে পারবেন।

Also, ReadThe Future of Taxation in Bangladesh: Embracing Automation for Efficiency

আয়কর প্রদানের সুবিধা

কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে আয়কর জমা না দিলে বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হতে পারেন।  যেমন – ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার উপরে ঋণ আবেদন করতে, আমদানি রপ্তানি নিবন্ধন সনদ পেতে, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ পেতে,  পাঁচ লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র কিনতে, সরকারের কাছ থেকে মাসিক পেমেন্ট অর্ডার হিসেবে প্রতি মাসে ১৬০০০ বা তার অধিক টাকা পেতে আয়করের অবিচ্ছেদ্য অংশ আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়।

এখন একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার হাতে থাকলেই সহজেই যে কেউ আয়কর দিতে পারবে। অনলাইনে আয়কর প্রদান একদিকে যেমন করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করছে অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাও আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

Table of Contents

মন্তব্য করুন